কলোসিয়াম গ্ল্যাডিয়েটরদের রক্তে রঞ্জিত | Colosseum | Rome's Arena of Death
অ্যাম্ফিথিয়েটার হল একটি উন্মুক্ত ভেন্যু, যা বিনোদন, পারফরম্যান্স এবং খেলাধুলার জন্য ব্যবহৃত হয়, যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর বুকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের এমপিথিয়েটার তৈরি করা হয়েছে, রোমান সভ্যতায় এমন একটি অ্যাম্ফিথিয়েটার তৈরি করা হয়েছে, যা এখন পর্যন্ত রোমান সাম্রাজ্যের অন্যতম পথিক হিসেবে পরিচিত, Jekhana এক Satha প্রায় ৫০,০০০ থেকে ৮০,০০০ দর্শক বসতে পারত।গ্ল্যাডিয়েটর যুদ্ধ ছিল ja অ্যাম্ফিথিয়েটারের প্রধান আকর্ষণ। এমনই এক ঐতিহ্যবাহী অ্যাম্ফিথিয়েটার নিয়ে আজকের এই ভিডিও
রোমান কলোসিয়াম বা ফ্লাভিয়ান অ্যাম্ফিথিয়েটার হলো রোম শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত এক প্রাচীন স্থাপত্য, যা রোমান সাম্রাজ্যের অন্যতম প্রধান প্রতীক হিসেবে পরিচিত। এর নির্মাণশৈলী, বিশাল আকার, এবং অতুলনীয় ইতিহাসের কারণে এটি বর্তমানে বিশ্ব ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনগুলোর একটি।
রোমান কলোসিয়াম ৭০ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট ভেস্পাসিয়ান নির্মাণ শুরু করেন এবং এটি তার উত্তরাধিকারী সম্রাট টাইটাস ৮০ খ্রিস্টাব্দে শেষ করেন। পরবর্তীতে সম্রাট ডমিশিয়ান কিছু অংশ যোগ করেন। এটি লাল ইট, তুফা, এবং বিশেষ ধরনের চুনাপাথর দিয়ে তৈরি, যা একে মজবুত এবং টেকসই করে তুলেছে। কলোসিয়ামের পুরো স্ট্রাকচারটি একটি বাইরের দেয়াল এবং অভ্যন্তরীণ মঞ্চ ও সিটিং এরিয়ার সমন্বয়ে তৈরি। এটি এলিপস আকারে নির্মিত, যার উচ্চতা প্রায় ১৫৭ ফুট এবং বাইরের ব্যাস প্রায় ৬১৫ ফুট। পুরো কাঠামোটি তিনটি স্তরে বিভক্ত, প্রতিটি স্তরের আলাদা স্থাপত্যশৈলী রয়েছে। এর খিলান এবং পিলারগুলিতে তুস্কান, আইওনিক, এবং করিন্থিয়ান শৈলীর নিখুঁত ব্যবহার দেখা যায়।
রোমান কলোসিয়ামের অভ্যন্তরে তিনটি পৃথক স্তর এবং অনেক সিটিং এরিয়া ছিল, যাতে এক সময়ে প্রায় ৫০,০০০ থেকে ৮০,০০০ দর্শক বসতে পারত। এখানে বিভিন্ন স্তরে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির লোকজন বসার জন্য ব্যবস্থা করা হতো। সাধারণত উচ্চ শ্রেণির লোকেরা কাছাকাছি বসার স্থান পেত এবং নিচের শ্রেণির লোকেরা উপরে বসার সুযোগ পেত।
কলোসিয়াম রোমানদের প্রধান বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো এবং এখানে বিভিন্ন প্রকার প্রতিযোগিতা ও যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হতো। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো:
গ্ল্যাডিয়েটর যুদ্ধ: গ্ল্যাডিয়েটর যুদ্ধ ছিল কলোসিয়ামের প্রধান আকর্ষণ। গ্ল্যাডিয়েটররা মূলত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যোদ্ধা ছিল, যারা একে অপরের সঙ্গে যুদ্ধ করত। গ্ল্যাডিয়েটর যুদ্ধ রোমান সমাজে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় ছিল এবং অনেক ক্ষেত্রে যুদ্ধের ফলাফলের ওপর দর্শকদের মতামত নেওয়া হতো।
প্রাণী শিকার ও যুদ্ধ: কলোসিয়ামে আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বন্য প্রাণী আনা হতো এবং তাদের সঙ্গে গ্ল্যাডিয়েটরদের লড়াইয়ের আয়োজন করা হতো। লড়াইয়ের জন্য সিংহ, ভালুক, হাতি, হরিণ এবং এমনকি কুমিরও আনা হতো। এগুলো দেখার জন্য জনসাধারণ ভিড় করত এবং বন্যপ্রাণীর সঙ্গেও যোদ্ধাদের লড়াই ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয়।
নকল নৌযুদ্ধ: কলোসিয়ামে এক ধরনের নকল নৌযুদ্ধও হতো, যা "নাভমাচিয়া" নামে পরিচিত। এই প্রদর্শনীর জন্য কলোসিয়ামের মঞ্চে পানি ভরে যুদ্ধক্ষেত্র তৈরি করা হতো। এতে দুটি দলের মধ্যে নৌযুদ্ধের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হতো।
বলী প্রথা: রোমান শাসকগণ প্রায়ই বলী প্রথার আয়োজন করতেন, যেখানে যুদ্ধবন্দী, দণ্ডিত অপরাধী বা ক্রীতদাসদের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করা হতো। প্রায়ই তারা গ্ল্যাডিয়েটরদের বা বন্য প্রাণীদের দ্বারা নিহত হতো।
কলোসিয়াম কেবল একটি স্থাপত্যের নিদর্শন নয়; এটি রোমান সাম্রাজ্যের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে রোমান শাসকরা তাদের ক্ষমতা ও শ্রেষ্ঠত্বের প্রদর্শন করতেন। কলোসিয়ামের অনুষ্ঠানগুলো মূলত রোমানদের ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য আয়োজন করা হতো, এবং এ ধরনের প্রদর্শনী জনসাধারণের কাছে শাসকদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে সাহায্য করত।
মধ্যযুগে ভূমিকম্প এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে কলোসিয়ামের অনেক ক্ষতি হয়েছে। তারপরও এর একাংশ এখনও টিকে আছে। ইউনেস্কো ১৯৮০ সালে কলোসিয়ামকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষণা করে। ২০০৭ সালে এটি বিশ্বের নতুন সাত আশ্চর্যের মধ্যে একটি হিসেবে স্বীকৃতি পায়, যা এটিকে আরও প্রসিদ্ধ করে তোলে। বর্তমানে কলোসিয়াম একটি প্রধান পর্যটন কেন্দ্র, যেখানে প্রতিবছর লাখো পর্যটক ভ্রমণ করেন। রোমান কলোসিয়াম একটি চিরকালীন স্মৃতি হয়ে থাকবে, যা রোমান সাম্রাজ্যের ঐতিহাসিক শক্তি, গৌরব, এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে চলছে।