বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর জীবনের গল্প
এক চোর চুরি করে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে যায় এক যুবকের কাছে। চোরকে জড়িয়ে ধরে যুবক চিৎকার করতে থাকে, "চোর চোর" বলে। চোর তাকে বারবার বলতে থাকে ছেড়ে দেবার জন্য! শেষে হুংকার দিয়ে বলে আমায় না ছাড়লে তারও পরিনতি ভালো হবে না।
তৎসত্ত্বেও যুবক চোরকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে সকলকে ডাকতে থাকে। বেগতিক দেখে চোরও তখন সব জিনিস ফেলে ঐ যুবককে জড়িয়ে ধরে চোর, চোর বলে চিৎকার শুরু করে। চিৎকারে লোকজন বেড়িয়ে এসে দেখে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে চোর চোর চিৎকার করছে। কেউই বুঝে উঠতে পারছে না আসল চোর কে।
তখন বিব্রত জনসাধারণ পুলিশকে ডেকে তাদের তুলে দেয় পুলিশের হাতে! পুলিশ তাদের কোর্টে চালান করে দেয়! পরদিন কোর্টে তাদের বিচার শুরু হলে বিচারক জানতে চান কে প্রকৃত চোর। কিন্তু দু'জনেই পরস্পরকে দোষারোপ করতে থাকে।
বিচারক নিজেও বিব্রত হয়ে বাধ্য হন তাদের দুজনকেই সাজা দিতে চায়! বিচারক বলেন "এখান থেকে দু' মাইল দূরে একটি মরা আছে! তোমরা দু'জনেই খালি পায়ে প্রখর রোদে গিয়ে ঐ মরাকে বহন করে কোর্টে আনবে! এটাই তোমাদের সাজা ধার্য হ'লো"
বাস্তব জীবনের গল্প
দু'জনকে নিয়ে চললো প্রহরী! গন্তব্যে পৌছে সেই মরাটাকে দেখিয়ে বলে এটা কাঁধে নিয়ে খালি পায়ে রওনা দাও কোর্টের উদ্দেশ্যে। তারা অগত্যা তাই করতে বাধ্য হয়!
প্রখর তাপে ও খালি পায়ে পাথরকুচির পথে ঐ মরাকে বহন করতে করতে একজন দুঃখ করে বলে; "ভগবান , এ তোমার কেমন বিচার! আমি ভালো কাজ করেও সাজা পাচ্ছি" চোর তখন বলে ওঠে; "কেন, তোকে না হাজারবার বললাম আমায় ছেড়ে দে ছেড়ে দে। শুনলি না, মহৎ হতে চেয়ে আমায় আটকালি, এখন ভোগ! আমি তো চুরির দায়ে সাজা পেতামই! তুইও পেলি কথা না শোনার ফলে! ভালোই হয়েছে! " বলে চোর হাসতে লাগলো।
শেষে ঐ মরাকে কোর্ট প্রাঙ্গনে নামিয়ে দু'জন বললো; "হুজুর, এবার আমরা মুক্ত তো, যেতে পারি হুজুর?" বিচারক তখন বললেন "না, তোমাদের বিচার এখন শুরু হবে" এই বলেই তিনি ঐ মরার
দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন ; "গয়ারাম! কে আসলে চোর? "
সত্য বিচার
মরা তখন লাফ দিয়ে উঠে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলেন" হুজুর, এটা চোর, আর এই যুবকটি চোরকে আটকেছে" বিচারক তখন চোরকে আটকে রেখে ঐ যুবকটিকে পুরস্কার দিয়ে মুক্তি দেন। বিচারটি
গল্প নয় একদমই সত্য ঘটনা! বিচারক কে ছিলেন জানলে অবাক হবেন সকলে!
বিচারক ছিলেন বাঙলার এক প্রবাদ প্রতিম ব্যাক্তিত্ব ঋষি বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তিনি কর্ম জীবনে ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন।